পেঁয়াজ চাষের কার্যকরী কয়েকটি পদ্ধতি
পেঁয়াজ চাষের কার্যকরী পদ্ধতি রয়েছে৷ সেগুলো সম্পর্কে আপনি যদি জানেন তাহলে পেঁয়াজ চাষ করে আপনিও হতে পারেন অনেক লাভবান৷ আমরা পেঁয়াজ চাষ সম্পর্কে সকল কিছু এই কনটেন্টে বিস্তারিত জানাবো৷
বর্তমানে অনেক কৃষক সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে পারেনা৷ এজন্য অনেক কৃষকের আর্থিক ক্ষতি হয়৷ আপনি যদি চাষাবাদে অধিক লাভবান হতে চান তাহলে পুরো পোস্টটি ভালোভাবে মনোযোগ সহকারে পড়ুন৷
পেজ সূচিপত্র:পেঁয়াজ চাষের কার্যকরী পদ্ধতি
- পেঁয়াজ চাষের জন্য মাটি ও জমি নির্বাচন
- পেঁয়াজের উচ্চ জাতসমূহ
- পেঁয়াজের স্থানীয় জাত
- চারা তৈরি ও রোপন ব্যবস্থাপনা
- পেঁয়াজের জন্য সার ব্যবস্থাপনা
- সেচ ব্যবস্থাপনা
- পেঁয়াজের বিভিন্ন রোগসমূহ
- রোগের প্রতিকার
- সংগ্রহের সময় ও ফলন
- পেঁয়াজের পুষ্টিগুণ
- শেষ কথা : পেঁয়াজ চাষের কার্যকরী পদ্ধতি
পেঁয়াজ চাষের জন্য মাটি ও জমি নির্বাচন
পেঁয়াজ চাষের জন্য মাটি ও জমি নির্বাচন করা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ আপনি যদি কোন কিছু চাষাবাদ করেন তার সম্পূর্ণ ফলন নির্ভর করে ওই জমি ও মাটির উপর৷ তাই পেঁয়াজ চাষের ক্ষেত্রে যে ধরনের জমি ও মাটি প্রয়োজন তা এখান থেকে আপনি সম্পূর্ণ জানতে পারবেন৷ পেঁয়াজ সবচেয়ে ভালো হয় উর্বর বেলে দো-আঁশ মাটিতে৷ এই মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য সবচেয়ে উত্তম৷ তবে পলিযুক্ত দো- আঁশ মাটিতে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করা যায় তাহলেও পেঁয়াজের সাইজ অনেকটা বড় হয়৷
আরো পড়ুন : সাত দিনে মোটা হওয়ার কার্যকরী উপায়
এছাড়াও সব মাটিতেই পেঁয়াজের চাষ হতে দেখা যায়৷ কিন্তু এটেল মাটিতে পেঁয়াজের ফলন কম হয় কারণ এটেল মাটি শক্ত হওয়ায় পেঁয়াজের কন্দগুলো সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না৷পেঁয়াজ চাষের জন্য এমন জমি নির্বাচন করবেন যেখানে বৃষ্টি হলে কোন পানি জমে থাকবে না এবং জমিতে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো পরে৷ আবার মাটির পিএইচ মাত্রা যদি ৫.৮-৭.৫ হয় তাহলে বীজের মান খুব ভালো হয়৷
পেঁয়াজের উচ্চ জাতসমূহ
পেঁয়াজ উচ্চ জাত সম্পর্কে আমাদের দেশের অনেক কৃষকই এখনো জানেনা৷ আমাদের দেশে এখনো বেশিরভাগ কৃষকই দেশি জাতের পেঁয়াজ চাষ করে থাকে৷ বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে জানা গেছে বাংলাদেশের ৬ টি মুক্তায়িত করা হয়েছে ৷ চলুন এবার এই ছয়টি মুক্তায়িত জাত সম্পর্কে জানা যাক৷
- বারি পেঁয়াজ-১ ও বারি পেঁয়াজ-৬ এই দুই জাতটি আমাদের দেশে শীতকালে চাষাবাদ করা হয়৷
- বারি পেঁয়াজ -২,বারি পেঁয়াজ-৩, বারি পেঁয়াজ -৪ ও বারি পেঁয়াজ-৫ এই জাতগুলো আমাদের দেশে সারা বছরই চাষ করা যায়৷তবে এগুলা গ্রীষ্মকালীন জাত৷এই জাতগুলোর পেঁয়াজের আকার গোলাকার হয় এবং এই জাতটি মধ্য পর্যায়ের ঝাঁঝ হয়৷
পেঁয়াজের স্থানীয় জাত
পেঁয়াজের স্থানীয় জাত অনেক রয়েছে৷ এগুলো সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা৷ স্থানীয় জাতের মধ্যে যেগুলো রয়েছে সেগুলো হলো কৈলাসনগর, ভাতি,তাহেরপুরি ও ঝিটকা ইত্যাদি জাতগুলো হলো উল্লেখযোগ্য৷ যারা আগাম রবি মৌসুমে এই জাতগুলো চাষ করবেন তাদের ফলন অনেক ভালো হবে৷ এ জাতগুলো আমাদের দেশের উত্তরবঙ্গের ফরিদপুর, কুষ্টিয়া ও যশোর এর অঞ্চলগুলোতে চাষ করার জন্য অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে৷
আবার পেঁয়াজের কিছু হাইব্রিড জাত রয়েছে৷ এরমধ্যে অনেকগুলো আমাদের দেশের চাষিরা চাষাবাদ করেন৷ হাইব্রিড জাতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লালতীর, সুপ্রিম সিড ও ফেরোমোন এগুলো সহ আরো কয়েকটি কোম্পানির হাইব্রিড জাত কৃষকের চোখে পরেছে কারণ এই জাতগুলো অধিক পরিমাণে ফলন হয়৷
চারা তৈরি ও রোপন ব্যবস্থাপনা
চারা তৈরি করতে হলে আগে মৌসুম সম্পর্কে জানতে হবে৷ আমাদের দেশে দুই মৌসুমেই পেঁয়াজের চাষ করা যায় ৷ রবি মৌসুমের উপযুক্ত সময় অক্টোবর - নভেম্বর মাস এবং খরিফ মৌসুমের জন্য জুলাই - আগস্ট মাস৷ এই অনুযায়ী বীজতলায় বীজ দিয়ে চারা তৈরি করতে হবে৷ তবে বীজতলায় বীজ ছিটানোর পূর্বে আগের দিন সন্ধাবেলায় বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে৷ তারপর পরের দিন সকাল বেলা পানি থেকে তুলে রৌদ্রে ১ ঘন্টা শুকানোর পরে বীজতলায় ছিটাতে হবে৷ তাহলে ভালো মানের চারা হবে৷
চারার বয়স যখন ৪০-৪৫ দিন হয় তখন সেই চারা জমিতে লাগানোর জন্য উপযুক্ত হয়৷ জমিতে মাটিতে আড়াআড়িভাবে ৫ টি চাষ দিয়ে মাটিকে ঝুরঝুরা করে ফেলতে হবে৷ তারপর বেড তৈরি করে তার ভিতরে ১০ সে.মি. থেকে ১৫ সে.মি. দূরত্বে চারা রোপন করতে হবে৷ তবে দুইটি বেডের মাঝে পানি নিষ্কাশনের জন্য ৩০ সে.মি. নালা রাখতে হবে৷
পেঁয়াজের জন্য সার ব্যবস্থাপনা
পেঁয়াজ চাষে অধিক পরিমাণে কম্পোস্ট সার বা গোবর সারের প্রয়োজন হয়৷ হেক্টর প্রতি পেঁয়াজের জমিতে ৮ থেকে ১০ টন গোবর সার দিতে হবে৷ টিএসপি সার ১৯০ থেকে ২০০ কেজি, ইউরিয়া সার ২৫০ থেকে ২৭০ কেজি এবং এমওপি সার ১৫০-১৭০ কেজি সার দিতে হয়৷এগুলো সার সবগুলো পেঁয়াজের ফলন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে৷
আরো পড়ুন :শরীর দুর্বল হয় কোন ভিটামিনের অভাবে
এছাড়া যখন জমি তৈরি করা হবে তখন ১৬০-১৭০ কেজি ইউরিয়া সারের সাথে আরো প্রয়োজনীয় কিছু ঔষধ মিশিয়ে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে৷ চাইলে আগাছা দমনের জন্য বিষ মিশিয়ে জমিতে স্প্রে করুন৷ তাহলে জমিতে অপ্রয়োজনীয় আগাছা কম হবে৷
সেচ ব্যবস্থাপনা
পেঁয়াজে অধিক পরিমাণে পানির প্রয়োজন হয়৷ প্রত্যেক সপ্তাহে একবার করে সেচ দেওয়া উত্তম৷ এতে পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়৷ তবে পেঁয়াজের জমিতে বর্ষার পানি যেন জমে না থাকে৷ এর জন্য জমিতে পানি নিষ্কাশনের জন্য নালা তৈরি করতে হবে৷ পেঁয়াজে সেচ দেওয়ার পর জমিতে হালকা করে নিড়ানি দিতে হবে এতে করে আগাছাগুলো জন্ম নিতে পারবে না৷
পেঁয়াজের বিভিন্ন রোগসমূহ
পেঁয়াজে বিভিন্ন ধরনের পোকা ও রোগ রয়েছে যা পেঁয়াজের অনেক ক্ষতি করে৷ আমরা আমাদের খাদ্যে প্রতিদিনই কমবেশি পেঁয়াজ ব্যবহার করি৷ এই পেঁয়াজ যেমন মসলা হিসেবে ব্যবহার হয় তেমনি এর অনেক ঔষধি গুনও রয়েছে৷ আমাদের দেশে পোকার আক্রমণ বেশি তাই ফলন কম হয় চলুন কয়েকটি অন্যতম রোগ সম্পর্কে জেনে নি-
- পেঁয়াজের কান্ড পচা রোগ
- পেঁয়াজের চারার গোড়া পচা রোগ
- পেঁয়াজের কন্দ পচা রোগ
- পেঁয়াজের পার্পল ব্লচ রোগ
- পেঁয়াজের কন্দ ফেটে যাওয়া
এছাড়াও আরো অনেক ধরনের পোকা যেমন লেদাপোকা এমন আরো অনেক প্রকার পোকা হয়েছে যা পেঁয়াজের অনেক ক্ষতিসাধন করে৷চলুন এবার এগুলোর মধ্যে কিছু রোগের প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নি৷
রোগের প্রতিকার
পেঁয়াজের রোগের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সর্বপ্রথম সুস্থ ও রোগ মুক্ত চারা জমিতে বপন করতে হবে৷ ছত্রাক ট্রাইকোডারমা বীজের ওপর প্রয়োগ করে বীজকে শোধন করে তারপর লাগাতে হবে৷ এরপর যেই গাছ রোগে আক্রান্ত হবে সেই গাছকে খুব শীঘ্রই জমি থেকে তুলে পুড়িয়ে বা ধ্বংস করে ফেলতে হবে৷ এতে করে ওই রোগটি জমিতে সহজে ছড়াতে পারবে না৷
পেঁয়াজের লেদাপোকা সাধারণত দিনে দেখা যায় না এগুলো রাতে আক্রমণ করে৷ এর দমনে জমিতে চাষের সময় কারবোফিউরান ৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে৷ আর যদি বেশি আক্রমণ হয় তাহলে নোভালিউরন ১ মিলি প্রত্যেক লিটার জলের সাথে মিশিয়ে জমিতে সন্ধ্যার দিকে স্প্রে করুন৷
আরো পড়ুন :বাংলা আর্টিকেল লেখার নিয়ম
পেঁয়াজের আরেকটি নীল ধরনের পোকা রয়েছে এই পোকাটি পেঁয়াজের পাতার ত্বকের মাঝে নালার মতন করে দাগ টানে৷ প্রথম অবস্থায় এই পোকার আক্রমণ দেখা দিলে তখন পাতা তুলে ফেলে দিতে হবে৷ বেশি আক্রমণ দেখা দিলে অ্যাজাডিরাক্টিন ১% ইসি ৩ মিলি প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে জমিতে স্প্রে করুন৷
সংগ্রহের সময় ও ফলন
পেঁয়াজ সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হলো বীজ বপন করার পর থেকে ৩ মাস সময় লাগতে পারে৷ ৩ মাস পরে পেঁয়াজ সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হয়৷ এছাড়াও যদি পেয়াজ গাছের পাতা শুকিয়ে হলুদ বর্ণের হয় তখন পেঁয়াজ সংগ্রহ করা যায়৷পেঁয়াজ যদি পরিপক্ক হয় তাহলে পেঁয়াজের ফলন অনেক বেশি হয় এবং এগুলো অনেকদিন ধরে সংরক্ষণ করা যায়৷
মৌসুম ভেদে পেঁয়াজের ফলন হয়৷ আমাদের দেশে রবি মৌসুমে পেঁয়াজের ফলন হয় প্রতি হেক্টরে ১২ থেকে ১৬ টন৷ আর খরিপ মৌসুমে রবি মৌসুমের থেকে একটু কমে প্রতি হেক্টরে ১০ থেকে ১২ টন হয়৷ উপযুক্ত সময়ে পেঁয়াজ সংগ্রহ করলে পেঁয়াজের মান ও সংরক্ষণে অনেক সুবিধা হয়৷
পেঁয়াজের পুষ্টিগুণ
পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে এবং পেঁয়াজে সামান্য পরিমাণে ভিটামিন সি ও রয়েছে ৷ কাঁচা পেঁয়াজের রস আমাদের চুলের বৃদ্ধিতে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে৷ এছাড় পেঁয়াজ আমাদের হজমি নালার জ্বালা কমায়,কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় ও রক্ত পরিশোধন করতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে৷
এছাড়াও যাদের এলার্জি, গলা ব্যথা, জ্বর ও সর্দি কাশি ইত্যাদি সমস্যার হয় তাহলে মধুর সঙ্গে হালকা কাঁচা পেঁয়াজের রস মিশিয়ে খান৷ যদি এভাবে খান তাহলে খুব তাড়াতাড়ি এ রোগ থেকে মুক্তি পাবেন৷ আমাদের মধ্যে যাদের হজমে সমস্যা হয় তারা কাঁচা পেঁয়াজ খেয়ে দেখেন আপনার হজমি শক্তি বৃদ্ধি হয়ে যাবে৷ আরো অনেক গুণ রয়েছে৷
শেষ কথা : পেঁয়াজ চাষের কার্যকরী পদ্ধতি
ইতোমধ্যে পেঁয়াজ চাষের কার্যকরী পদ্ধতি সম্পর্কে আমরা সবাই জেনে গেছি৷ আমরা যদি এই অনুসারে পেঁয়াজ চাষ করি তাহলে অনেক লাভবান হতে পারবো৷ উপরে যেসব রোগ সম্পর্কে বলা রয়েছে এসব রোগ দেখা দিলে প্রতিকার খুব দ্রুত করতে হবে৷ এতে করে পেঁয়াজের ফলন খুব ভালো হবে৷
প্রিয় পাঠক আমাদের পোস্টটি পড়ে যদি আপনি ভালো মনে করে থাকেন তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটকে ফলো দিয়ে পাশে থাকুন৷ আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের টপিক নিয়ে ব্লক পোস্ট করে থাকি৷ আজকে এ পর্যন্তই ততদিন সুস্থ থাকবেন ভালো থাকবেন ৷ আল্লাহ হাফেজ৷
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url