বেগুন চাষের কয়েকটি পদ্ধতি ও পরিচর্যা
বেগুন হলো আমাদের সবার পরিচিত একটি সবজি৷ বাংলাদেশে প্রায় সব জেলাতেই কমবেশি বেগুনের চাষ হয়ে থাকে এবং সব জেলাতেই কমবেশি বেগুনের ফলন ভালো হয়৷বেগুন চাষ করে অনেক কৃষক লাভবান হয়৷
আবার কিছু কৃষক রয়েছে যারা সঠিক নিয়মে বেগুন চাষ করতে না পারায় তাদের বেগুন চাষে অনেক ক্ষতি হয়৷ তাই আমরা এই পোস্টটিতে বেগুন চাষ পদ্ধতি,জমি নির্বাচন, বেগুনের জাত, সার প্রয়োগ, পানি সেচ ও নিষ্কাশন,পোকাদমন বেগুন চাষের সময় পরিচর্চা ইত্যাদি সম্পর্কে সবকিছুর বিস্তারিত আলোচনা করবো৷পেজ সূচিপত্র: বেগুন চাষের কয়েকটি সহজ পদ্ধতি
মাটি নির্বাচন
কোন কিছু উৎপাদন করার আগে সেই ফসলটি কোন মাটিতে ভালো হয় সেটা জানা সবচেয়ে জরুরী৷ যদি মাটি নির্বাচন সঠিক হয় তাহলে ফলন ভালো হবে৷ বেগুন প্রায় সব ধরনের মাটিতেই চাষ করা হয়৷ তবে পলি দো-আশ এবং এটেঁল দো- আশ মাটি বেগুনের চাষ করার জন্য উত্তম৷ কারণ এই মাটিতে বেগুনের চাষের ফলন সবচেয়ে বেশি হয়৷ যারা আগাম জাতের বেগুন চাষ করতে চান তারা বেলে মাটিতে চাষ করতে পারেন৷ কারণ আগাম জাতের বেগুনগুলো বেলে মাটিতে ভালো হয়৷
আড়ো পড়ুন: বাংলা আর্টিকেল লেখার নিয়ম
বেগুন চাষের মৌসুম
আমাদের বাংলাদেশ যে জলবায়ু এই জলবায়ুতে প্রায় সারা বছরই বেগুনের চাষ করা যায়৷ আমাদের দেশে দুইটি মৌসুম৷ যথা- রবি মৌসুম ও খরীপ মৌসুম৷ তবে খরীপ মৌসুমের চেয়ে রবি মৌসুমে বেগুন চাষ করলে বেশি ফলন পাওয়া যায়৷ রবি মৌসুমে বেগুন চাষ করলে সব ধরনেরই বেগুনের জাত লাগানো যেতে পারে তবে খরীফ মৌসুমীর জন্য বারোমাসি জাতের বেগুনের চারা রোপন করতে হবে৷
জমি নির্বাচন ও জমি তৈরি
আমরা সকলেই জানি, ছায়াযুক্ত জমিতে সব ফসল ভালো হয় না। তেমনি বেগুন চাষ করতে অবশ্যই জমি ছায়ামুক্ত হতে হবে৷ এমন জমি হতে হবে যেই জমির চারপাশে কোন গাছপালার ছায়া থাকবে না৷ সব সময় জমিতে আলো বাতাস পায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে ৷
সর্ব প্রথমে জমিতে আড়াআড়ি ভাবে ৪-৫ টি চাষ দিতে হবে৷ তারপরে জমিতে মই দিয়ে মাটিকে ঝুরঝুরা করে ফেলতে হবে৷ জমিতে চাষের সময় গোবর সার দিয়ে চাষ করলে বেগুনের চাষ ভালো হবে৷ জমিতে সকল কিছু ভালো করে প্রয়োগ করার পর ৩-৪ দিন রেখে দিবেন৷ তারপরে আপনি যে জাতটি চাষ করবেন সেই অনুযায়ী জমিতে বেড প্রস্তুত করবেন৷
চারা নির্বাচন ও রোপনের সময়
বেগুনের চারার বয়স যখন ৩৫-৪৫ দিন হয় তখন এই চারাটি রোপনের উপযোগী হয়৷ কারণ এই সময় বেগুনের চারার ৪-৫ টি পাতা থাকে৷ এতে বেগুনের চারা মরার তেমন একটা ভয় থাকে না৷
বেগুনের চারা রোপনের উপযুক্ত সময় হলো বিকেল বেলা৷ এ সময় চারা রোপন করলে চারাতে তেমন রোদের আলো পরে না৷ এতে করে চারাগুলো সতেজ থাকে৷
চারা রোপন পদ্ধতি
আমাদের দেশে অনেক ধরনের বেগুনের জাত রয়েছে৷ বিশেষ করে বড় জাতের বেগুনের জন্য এক লাইন থেকে অন্য লাইনের দূরত্ব ৯০ সেমি. হতে হবে এবং ১ চারা থেকে অন্য চারার মাঝামাঝি দূরত্ব ৬০ সেমি. রাখতে হবে৷ আর ছোট জাতের বেগুনের জন্য এক লাইন থেকে অন্য লাইনের দূরত্ব ৭০ সেমি রাখতে হবে এবং ১ চারা থেকে অন্য চারার দূরত্ব ৫০ সেমি. হলেই যথেষ্ট৷ চারাগুলো বিকেল টাইমে লাগানোই উত্তম এতে করে চারা শুকিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না৷
স্যার প্রয়োগ ব্যবস্থাপনা
একটি জমিতে কি পরিমান সার ও কীটনাশক ব্যবহার ব্যবহার করা যেতে পারে তা ওই জমির উর্বরতা ওপর নির্ভর করে৷ জমিতে যদি অপুষ্টি লক্ষণ দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে৷ এছাড়াও বেগুন চাষের ক্ষেত্রে শতক প্রতি নিচের দেওয়া সার ও কীটনাশকগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে৷
জমিতে প্রথম চাষে অপুষ্টি লক্ষণ থাকলে ৩ কেজি ঢলো চুন ব্যবহার করা যেতে পারে৷ দ্বিতীয় চাষে শত প্রতি ১০০ কেজি গোবর সার ব্যবহার করতে হবে৷ এবং তৃতীয় চাষে যেগুলো দিতে হবে তা হলো- ১৫০ গ্রাম পটাশ, ১ কেজি টিএসপি, ৭০ গ্রাম বোরন,১ কেজি খৈল,১০০ গ্রাম দানাদার যেকোনো কীটনাশকসহ সবগুলো একসাথে ভালো করে মিশ্রণ করে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে৷ প্রয়োগ করার পরে ৩-৪ দিন রেখে দিতে হবে৷
জমিতে তিন কিস্তিতে সার প্রয়োগ করতে হবে৷ প্রথম কিস্তি চারা লাগানোর ১০ থেকে ২৫ দিন পর৷ দ্বিতীয় কিস্তি যখন গাছে বেগুন ধরা শুরু হবে তখন৷ তৃতীয় কিস্তি হলো বেগুন তোলার মাঝামাঝি সময়ে সার প্রয়োগ করতে হবে৷ আর বিশেষভাবে জমিতে যদি রস না থাকে তাহলে স্যার প্রয়োগের পরেই সেচ দেওয়া উত্তম৷
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url